চুয়াডাঙ্গায় মিলছে না পানি! মাটির গভীরে নামানো হচ্ছে মটর


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২২, ২০২৪, ৯:৩৮ পূর্বাহ্ন
চুয়াডাঙ্গায় মিলছে না পানি! মাটির গভীরে নামানো হচ্ছে মটর

পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপ ও ইলেকট্রিক মোটরে পানির পরিমাণ কমে গেছে। ১০-১৫ ফুট নিচে নেমে গেছে পানির স্তর। যার কারণে গরমে পানি পাওয়া অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। অনেক নলকূপ ও ইলেকট্রিক মোটরে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সংকট দেখা দিয়েছে পানযোগ্য পানির। পানি পেতে ইলেকট্রিক মোটর নামানো হচ্ছে মাটির ১০ থেকে ১২ফুট গভীরে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা এলাকায় নিচের দিকে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিদিন।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় সরকারি সাড়ে পাঁচ হাজার ও ব্যাক্তি মালিকানায় মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকের বেশি নলকূপে পানি উঠছে না।
দামুড়হুদা উপজেলা সদর, সদাবরী, মদনা, দর্শনা, নতিপোতা, হাউলি, কুড়ুলগাছি, কার্পাসডাঙ্গা, কুতুবপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি নলকূপে একেবারেই পানি উঠছে না। বাকি নলকূপগুলোতে সামান্য পানি উঠছে। অনেকের নলকূপের পানি কম ওঠায় স্থান পরিবর্তন করে নলকূপ বসানো হলেও একই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় অনেকে রান্না, কাপড় ধোয়ার কাজে ব্যবহার করছে এক সময়কার অব্যবহৃত কূপ বা ইন্দারার পানি।
এ অবস্থায় পানির চাহিদা মিটাতে গভীর নলকূপ বসানোর দিকে ঝুঁকছেন অনেকে। পানির চাহিদা পুরন করতে ১০-১২ফিট গর্তখুড়ে মাটির রিং বসিয়ে মটর নিচে নামিয়ে পানি তুলতে হচ্ছে।
দামুড়হুদা উপজেলা সদরের দশমী পাড়ার আবু হাসনাত বলেন, আগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট মোটর চালালেই বাড়ির ছাদেও এক হাজার লিটার পানির  ট্যাংক পূর্ণ হয়ে যেত। প্রায় মাস দেড়েক আগে থেকে দুই থেকে তিন ঘণ্টা মোটর চালালেও প্রয়োজনীয় পানি মিলছে না।
একই ভাবে টিউবওয়েলের পানি উঠা বন্ধ হয়ে গেছে। সামান্য পানি উঠলেও কল চাপতে অনেক শক্তি ব্যয় করতে হচ্ছে। এভাবে চলতে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে বৈদ্যুতিক মোটর। ইতোমধ্যে একটি মটর পুড়ে গেছে। দুই দিন আগে সে ১২ ফিট গর্তখুড়ে ১২টি রিং বসিয়ে মটর নিচে নামিয়ে তার এখন পানির সমস্যার সমাধান হয়েছে।
দামুড়হুদার উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল করিম বিশ্বাস বলেন, তার ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই টিউবওয়েলে পানি উঠা বন্ধ হয়ে গেছে। সামান্য কিছু টিউবওয়েলে পানি উঠলে ও পরিমাণে খুবই কম। বাধ্য হয়ে প্রায় বাড়ীতে বৈদ্যুতিক মটর ৮-১০ফিট নিচে নামিয়ে পানি তুলছে। যাদের মটরের ব্যবস্থা নেই বা সামর্থ্য নেই তারা অন্যের বাড়ী থেকে পানি এনে তাদের পানির চাহিদা মেটাচ্ছে। তবে কিছু টিউবওয়েলে পানি উঠলেও, তাপদাহ চলমান থাকলে আর কিছু দিনের মধ্যে সে সব টিউবওয়েলের পানি উঠা বন্ধ হয়ে যাবে।

দামুড়হুদা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর ছয় থেকে আট ফুট নিচে নামছে পানির স্তর। বছর দশেক আগে এই এলাকায় ৪০ থেকে ৬০ ফুটের মধ্যে ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর ছিল। এখন বর্ষা মৌসুমে ১০০ থেকে ১৪০ ফুটের মধ্যে পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না। অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা এবং যত্রতত্র পুকুর-খাল-বিল ভরাট করে ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সামনে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে বলে জানান তিনি।